নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পটুয়াখালীর বাউফলে হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পেয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা। হাসপাতালে রোগীদের মাত্রাতিরিক্ত চাপ থাকায় বহির্বিভাগের রোগীকে মেঝেতে ও অন্যান্য ওয়ার্ডে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে ও গরমের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। শিশু বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষেরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে এদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ দিনে মোট ৮৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিনিই এখানে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন।উপচে পরা রুগীর ভিড়,কিন্তু বাউফল হাসপাতালে রয়েছে একটি মাত্র ডায়রিয়া ওয়ার্ড। যার ১২ টি বেড রয়েছে,এবং যা পর্যাপ্ত রোগী ধরনের অক্ষম।শয্যা সংখ্যা কম থাকার দরুন রোগীদের মেঝেতে কিংবা নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এদিকে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ গিয়ে দেখা গেছে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ভিড়। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসা নেয়া আমিরাবাদ গ্রামের ফজলে আলী নামের ৫৬ বছর বয়সী রোগীর ছেলে মো.রিয়াজ জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে তার বাবার ডায়রিয়া ও বমি দেখা দেয়। শনিবার সকালে দ্রুত হাসপাতাল নিয়ে এসেছি, তার চিকিৎসা চলছে। অন্য আরেক রোগীর স্বজন পিয়ারা বেগম বলেন, তার বড় বোন ৫৫ বছর বয়সী রাশিদা বেগম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, চিকিৎসা চলছে। তবে কিছু ঔষধ হাসপাতাল থেকে দেয়া হচ্ছে আর কিছু ঔষধ বাহির থেকে কিনে নিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। অপরদিকে রোগীদের চাপ বেড়ে গেলেও তাদের ঠিকমত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানিয়ছেন কর্তব্যরত নার্সরা। বাউফল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স হালিমা বেগম বলেন, ডায়রিয়া রোগীদের চাপ বেশি থাকায় আমাদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত মার্চ মাসে ৩২১ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে গতকাল সোমবার (৫ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত মোট ৯৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আমরা রোগীদের যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাছি। তিনি আরো বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে এসে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন, এভাবে চলতে থাকলে ২/৪ দিন পর ঔষধ সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যহত হতে পারে। তাই চিকিৎসরা যাতে ব্যহত না হয় সেজন্য ডায়রিয়া রোগীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় কলেরা স্যালাইন, স্যালাইন সেট, খাবার স্যালাইন, আইভি ক্যানুলা, সিপ্রোফ্লক্সাসিন-ইনজেকশন, মেট্রোনিডাজল ইনজেকশন এই সব ঔষধগুলো জরুরী ভিত্তিতে সরবারাহ করা দরকার। বর্তমান পরিস্থিতির ভিত্তিতে বাউফল উপজলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা:প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ-স্যালাইন সরবরাহ রয়েছে। গরমের কারণে ডায়রিয়া বেড়েছে। অতিতের যেকোন বছরের তুলনায় এবার ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার অনেক বেশী। এর হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে সবাইকে স্বাস্থ্য সম্মত খাবার গ্রহণ ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে।অন্যথায় এই ডায়রিয়ার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
Leave a Reply